সোয়েব সাঈদ, রামু :: কক্সবাজারের রামুতে ২ দিনের ব্যবধানে আরো একটি বাল্য বিয়ে পন্ড করে দিলেন ইউএনও প্রণয় চাকমা। ৭ম শ্রেণি পড়–য়া মেয়েকে বাল্য বিয়েতে বাধ্য করার অভিযোগে ভ্রাম্যমান আদালতে মেয়ের মাকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ২ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ডাদেশ দিয়েছেন।
রবিবার (৬ অক্টোবর) বিকালে এ বাল্য বিয়ের খবর পেয়ে রামুর ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের দুবাই ফিউচার পার্ক কমিউনিটি সেন্টারে অভিযান চালান ইউএনও প্রনয় চাকমা। দন্ডাদেশপ্রাপ্ত রহিমা খাতুন কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের উখিয়ারঘোনা টিলাপাড়া গ্রামের সৌদি প্রবাসী আবদুর রশিদের স্ত্রী। এসময় বিয়ের কাবিননামা সম্পাদনের জন্য তৈরী ভূয়া জন্মসনদও জব্দ করা হয়।
জানা গেছে, রবিবার ওই কমিউনিটি সেন্টারে কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের উখিয়ারঘোনা টিলাপাড়া গ্রামের সৌদি প্রবাসী আবদুর রশিদের মেয়ে উখিয়ারঘোনা সাইমুম সরওয়ার কমল উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ফারহানা ইয়াছমিন সুমির (১৪) সাথে রামুর জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের পশ্চিম নোনাছড়ি এলাকার শামসুল আলম ও গুলজার বেগমের ছেলে গিয়াস উদ্দিনের বিয়ের আসর বসে।
বাল্য বিয়ের বিষয়টি অবহিত হয়ে সেখানে যান রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) প্রণয় চাকমা, রামু থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) তানভীর, উপজেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা জুয়েল ভুইয়া, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন, সমাজসেবা কর্মকর্তা আবু মোতালেব ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সাদেকুর রহমান। তবে প্রশাসনের কর্মকর্তারা অভিযানে যাওয়ার পর কমিউনিটি সেন্টারে দেখা মেলেনি কণের। এসময় ইউএনও বাল্য বিয়ের সত্যতা পেয়ে বর গিয়াস উদ্দিনকে উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে নিয়ে যান। সন্ধ্যায় স্কুল ছাত্রী ফারহানা ইয়াছমিন সুমি ও তার মা সহ স্বজনরা ইউএনও’র কার্যালয়ে যান।
বর গিয়াস উদ্দিন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে জানান, মেয়ের পরিবার তাকে জন্মনিবন্ধন সনদ দিয়েছে। তাতে মেয়ের বয়স বিয়ের উপযোগি ছিলো। কিন্তু ওই সনদ যে ভূয়া তা তিনি জানতেন না।
উখিয়ারঘোনা সাইমুম সরওয়ার কমল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতিকুর রহমান জানান, ফারহানা ইয়াছমিন সুমি এ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্রী। বিদ্যালয়ে সংরক্ষিত পিএসসি সমাপনী পরীক্ষার সনদ অনুযায়ি তার জন্ম তারিখ ৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৫ ইং। মেয়েটি কয়েকমাস বিদ্যালয়ে আসছিলো না। তবে বাল্যবিয়ের বিষয়টি তিনি জানতেন না।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) প্রণয় চাকমা জানান, নাবালিকা মেয়েকে বাল্য বিয়েতে বাধ্য করার অভিযোগে মা রহিমা খাতুনকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ২ মাসের বিনাশ্রম সশ্রম কারাদন্ডাদেশ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ১৮ বছরের আগে বিয়ে করবে না এবং লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার নিয়ে স্কুল ছাত্রী ফারহানা ইয়াছমিনকে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের জিম্মায় দেয়া হয়েছে। এছাড়া রহিমা খাতুন জরিমানার অর্থ জমা দিয়ে জামিনে মুক্ত হন।
উল্লেখ্য গত বৃহষ্পতিবার (৩ অক্টোবর) রামু উপজেলার রশিদনগর ইউনিয়নের মুরাপাড়া এলাকার হাবিবুর রহমানের মেয়ে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী উম্মে হাবিবা সুমাইয়ার (১৩) বাল্য বিয়ে বন্ধ করেন ইউএনও প্রণয় চাকমা। পরিবারের লোকজন সম্মতি ছাড়াই জাল জন্মসনদ বানিয়ে তার বিয়ের প্রস্তুতি নেয়। নিজের বাল্য বিয়ে ঠেকানোর উদ্দেশ্যে উম্মে হাবিবা সুমাইয়া ওইদিন (৩ অক্টোবর) সকালে ১০৯ নম্বরে কল করে রামুর ইউএনও প্রণয় চাকমা’কে বিষয়টি অবিহত করে। ইউএনও তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে ওই বাল্য বিয়ে বন্ধ করে দেন।
এদিকে বাল্য বিয়ে প্রতিরোধে রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রণয় চাকমার অব্যাহত অভিযানে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন সর্বস্তুরের মানুষ। এভাবে অভিযান অব্যাহত থাকলে রামু উপজেলাকে বাল্য বিয়ের অভিশাপ থেকে মুক্ত করা সম্ভব হবে।
পাঠকের মতামত: